শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১২শ পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ

১২শ পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ

স্বদেশ ডেস্ক;

ইউপি নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা আলোকবালী ও রায়পুরা উপজেলার পর সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চরদিঘলদি ইউনিয়নেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ইউপি নির্বাচনী সহিসংতায় বাড়তে পারে লাশের সংখ্যা। সম্প্রতি পৃথক কয়েকটি সংঘর্ষে ৮ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হলেও থামছে না সহিংসতা। স্থানীয়দের মতে, আধিপত্য টিকিয়ে রাখা ও নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেই প্রতিপক্ষকে দমাতে প্রাণঘাতী খেলায় মেতে উঠেছেন এক শ্রেণির (মাতব্বর বা মোড়ল) সমাজপতিরা।

আগামী ১১ নভেম্বর চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। দুর্গম এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রায় ১২০০ পরিবারকে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। অভিযোগ মতে, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শাহীনের সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে। সম্প্রতি বর্তমান চেয়ারম্যানসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ৩ চেয়াম্যান প্রার্থী, ১৫ মেম্বার প্রার্থী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের ১২০০ পরিবারের প্রায় ৬ হাজার ভোটার এলাকা ছাড়া করার অভিযোগে দেওয়া হয়েছে সদর আসনের সংসদ সদস্য

নজরুল ইসলাম বীরপ্রতীক, নরসিংদী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক, নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১১ দপ্তরে। এছাড়া গতকাল সকালে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৩ নেতা। পরে দলীয় মনোনয়ন পান দেলোয়ার হোসেন শাহীন। এতে নাখোশ হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে আওয়ামী লীগের তিন নেতা বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে নৌকার দলীয় মনোনয়ন পায় দেলোয়ার হোসেন শাহীন। নৌকার প্রার্থী শক্তি বাড়াতে চরদিঘলদী ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস ও তার বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর টেঁটা-বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। লুট করে প্রায় ১০০টি গরু।

এদিকে সুষ্ঠু পরিবেশে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে এই নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিল মিয়া অভিযোগ করেন, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আমাদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই আমাদের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। এরইমধ্যে আমাদের গ্রামের প্রায় ১২শ পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে। আমরা গ্রামে ফিরে নিজের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদ মিয়া অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমার চাচাতো ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়ে তার চোখ উপড়ে ফেলে। শরীরের কয়েক জায়গায় টেঁটা বিঁধিয়ে দেয়। এখন সে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমি এর বিচার চাই।

আরেক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আমির হোসেন অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শাহিন আমাদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না। চরদিঘলদীর ৩ স্বতন্ত্র চেয়াম্যান ও ১০ মেম্বার প্রার্থীকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে গেলেই আমাদের ওপর হামলা করছে।

বর্তমান ইউপি সদস্য মুশিদুল হক সরকার অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী শক্তি বাড়াতে চরদিঘলদী ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ও বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুস ও তার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তারা বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আমাদের এলাকা ছাড়া করে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন শাহিনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গতকালের মতবিনিময়সভায় নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আমরা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কমিশনের নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কেউ যেন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটি পরিবারে উপার্জনক্ষম একজন চলে গেলে পুরো পরিবারটি কিন্তু পথে বসে যায়। প্রার্থীসহ সকলেই এই উপলব্ধিটা করতে হবে। তা হলেই সহিংসতা বন্ধ হবে।

জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মো. মারুফ খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময়সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম ও ঢাকা অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা খানম।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শাহেদ আহমেদ বলেন, চরাঞ্চলে যে আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো দেশীয়। ইতোপূর্বে অভিযান চালিয়ে চরদিঘলদী থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের জন্য প্রতিদিন পুলিশের অভিযান চলছে। এছাড়া গত কয়েক মাসে আট থেকে দশটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে সদরের করিমপুর এবং নজরপুরের মতো আধিপত্য বিস্তার কমে যাবে। যে চরাঞ্চলগুলোতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলোতে গত আড়াই বছরে কোনো ধরনের সংঘর্ষ বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877